বিশ্ব শিক্ষক দিবস
তিনি মানুষ গড়ার কারিগর

- প্রকাশঃ ০৭:৫৩:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
- / 45
শিক্ষক আলহাজ নুরুল হুদা | ছবি: লেখকের সৌজন্যে
আমরা মায়ের কোলে জন্মালেও বিশ্ববুকে সমাদৃত হই শিক্ষকের সুশিক্ষার অবদানে। শিক্ষক যেন সূর্যের মতো—নিজেকে জ্বালিয়ে আলো দেন ছাত্রদের। জীবনের অন্ধকারে যিনি হন আশার প্রদীপ, অজ্ঞতার ঘনঘোরে খুলে দেন জ্ঞানের দুয়ার। তাই বলা হয়—শিক্ষক জাতির নির্মাতা, সমাজের ভরসা এবং ব্যক্তিজীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। বোধকরি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি—আমার শিক্ষক; যার শিক্ষা ‘চিরউন্নত মম শির’-এর মন্ত্রে উদ্ভাসিত।
আমার জীবনের উত্তম আদর্শ আমার প্রিয় শিক্ষক আলহাজ নুরুল হুদা সাহেব। শ্রেণিকক্ষে তাঁর প্রবেশ মানেই যেন এক অন্যরকম আবহ। তাঁর প্রতিটি কথায় ফুটে ওঠে জ্ঞানের দীপ্তি। পাঠ্যবইয়ের কঠিন সূত্র তাঁর কণ্ঠে সহজ হয়ে যেত, ইতিহাসের পৃষ্ঠা যেন জীবন্ত হয়ে উঠত তাঁর ব্যাখ্যায়। তিনি শেখাতেন—“পড়াশোনা শুধু পরীক্ষায় নম্বর পাওয়ার জন্য নয়, পড়াশোনা মানে নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।”
তিনি কখনো শুধু শাসন করেননি, ভালোবাসায় জড়িয়েছেন আমাদের। ভুল করলে রাগারাগি নয়, বরং স্নেহের পরশে বুঝিয়ে দিতেন। তাঁর শাসনে ছিল দৃঢ়তা, কিন্তু আবরণে মমতা। একদিন বলেছিলেন, “মিজান, শিক্ষা কেবল তথ্য মুখস্থ করার নাম নয়; শিক্ষা হলো জীবনকে বোঝা, মানুষকে বোঝা।” এই এক বাক্য আমার জীবনদর্শন হয়ে গেছে।
তিনি আমাদের মধ্যে স্বপ্ন জাগিয়ে তুলতেন। বলতেন, “বড় হতে চাইলে বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। সেই স্বপ্ন পূরণে দরকার সততা, পরিশ্রম ও ধৈর্য।” তাঁর এই বাক্যগুলো আজও আমার হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। হতাশার মুহূর্তে তাঁর কণ্ঠ যেন ভেসে আসে—“ব্যর্থতা কোনো শেষ নয়; ব্যর্থতা হলো নতুন করে শুরু করার সুযোগ।” তখনই বুকের ভেতর জ্বলে ওঠে সাহসের অগ্নিশিখা।
আমার শিক্ষক কেবল জ্ঞানী নন, তিনি নীতিবান, সময়নিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল। তাঁর জীবন থেকে শিখেছি আদর্শে কীভাবে অটল থাকা যায়। তাঁর প্রতিটি আচরণ যেন পাঠ্যবইয়ের বাইরের এক জীবন্ত শিক্ষা।
শিক্ষক জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতা। শিক্ষকতা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। আমি আমার শিক্ষককে নিয়ে গর্ব করি, কারণ তিনি আমাকে শিখিয়েছেন মানুষ হতে। তিনি আমার চোখে স্বপ্ন এঁকেছেন, হাতে তুলে দিয়েছেন দিশার প্রদীপ। আজ আমি যতটা ভালো, তাঁর অবদান ততটাই। আর আগামী দিনে যদি কিছু হতে পারি, তবে তার মূলে থাকবে তাঁর শিক্ষা, তাঁর অনুপ্রেরণা।
আমি যদি হই রাজা, আমার শিক্ষক সেই রাজার মুকুট। একদিন এই শিক্ষকদের হাতেই তৈরি হবে নতুন প্রজন্মের আলোকিত অয়ন-আরমানীরা, যারা বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্ব দেবে। গর্বিত শিক্ষকগণই তাদের কারিগর।
পরিশেষে বলি—শিক্ষক শুধু জ্ঞানদাতা নন; তাঁরা সমাজের নির্মাতা। তাঁদের হাতে গড়ে ওঠে একেকটি প্রজন্ম, যাদের আলোয় আলোকিত হয় জাতি। তাই আমরা যেন তাঁদের প্রাপ্য সম্মান সর্বদা দেই, শর্তহীন ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায়।