পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতিবছরই চারুকলার শোভাযাত্রা হয়ে ওঠে প্রাণের মিলনমেলা। তবে এবারের বৈশাখে রয়েছে ব্যতিক্রমী আবহ। এতদিন যেটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত ছিল, এবার তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। বর্ণিল মুখোশ, লোকজ শিল্প আর সৃষ্টিশীল বার্তা নিয়ে এগিয়ে চলে এটি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও এতে অংশ নেন নানা বয়সের ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাক-ঢোল, বাঁশি আর চেতনার শব্দে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র।
এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। প্রতিপাদ্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা ও সাংস্কৃতিক চেতনার সংমিশ্রণ। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে, তার পর এটিই প্রথম বাংলা নববর্ষ উদযাপন।
শোভাযাত্রায় এবার মোট ২১টি মোটিফ রাখা হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ‘ফ্যাসিবাদী মোটিফ’। শনিবার ভোররাতে আগুন দিয়ে সেটি পুড়িয়ে দেওয়ার পরও চারুকলার শিল্পীরা সাহসিকতা ও দক্ষতায় সেটিকে পুনরায় তৈরি করেন—যা এবার প্রতিবাদের অন্যতম প্রতীক হয়ে ওঠে।
শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে টাইপোগ্রাফিতে ‘৩৬ জুলাই’, জাতীয় মাছ ইলিশ, ঘোড়া, বাঘ, এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধর পানির বোতলের প্রতিকৃতি। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্ত করা হয় তরমুজের মোটিফ।
লোকজ আবহ বজায় রাখতে শোভাযাত্রায় দেখা গেছে সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ফ্যাসিবাদের প্রতীকী মুখাকৃতি এবং নানা রঙে আঁকা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা বাঙালির ঐতিহ্য।
শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা পেরিয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, শোভাযাত্রা ঘিরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীজুড়ে ছিল পুলিশের সতর্ক নজরদারি।
এবারের বর্ষবরণ শুধু আনন্দের নয়, ছিল বার্তারও। ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’র মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো নববর্ষ ১৪৩২, যেখানে মিলেছে সংস্কৃতি, প্রতিবাদ ও ঐক্যের এক অনন্য মেলবন্ধন।
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবিঃ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
