ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (UIU)-তে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রবিবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ও ‘সিন্ডিকেটভিত্তিক’ উল্লেখকরে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে UIU শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও ন্যায্য অধিকারের দাবিতে ১৩ দফা দাবিউত্থাপন করেন। প্রায় ১,৯৪০ জন শিক্ষার্থীর অনলাইন ভোটের ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন ভাইস–চ্যান্সেলর(ভিসি) অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া আশ্বাস দেন, গ্রেডিং সিস্টেম ব্যতীত বাকি ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীরাসেই আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রেণীকক্ষে ফিরে যান।
কিন্তু বিগত আট মাসেও অধিকাংশ দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদেরঅভিযোগ, তৎকালীন ভিসি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূর্বঘোষিত মিডটার্ম ইম্প্রুভমেন্ট ফি ২০০০ টাকা এবং ফাইনাল ইম্প্রুভমেন্ট ফি ৩০০০ টাকা নির্ধারণকরলেও পরে তা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৪৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। পাশাপাশি, পরীক্ষার সময় ১৫ মিনিট কমিয়ে দেওয়া, পরীক্ষাকক্ষেকোর্স শিক্ষকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল খারাপ করার অভিযোগও ওঠে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হচ্ছে ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে এবং অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে।
মেডিকেল ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রেও বিনামূল্যে মেকআপ পরীক্ষার প্রতিশ্রুতি মানা হয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীরা কোর্স উইথড্রেরআবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। একটি ঘটনায়, বাবার মৃত্যু সনদ জমা দেওয়ার পরও এক শিক্ষার্থীর আবেদন প্রত্যাখ্যানকরা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মতে চরম অমানবিক আচরণ।
২৬ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে আন্দোলনে নামে এবং দুপুর ২টার মধ্যে আলোচনারআহ্বান জানায়। কোনো সাড়া না পেয়ে, শিক্ষার্থীরা দুপুর ৩টা থেকে শান্তিপূর্ণ অনশন শুরু করে। রাত ১০টার দিকে ভিসিআবুল কাশেম মিয়া পদত্যাগ করলে অনশন ভঙ্গ করা হয়।
তবে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কেবলমাত্র ভিসি এবং সিএসই বিভাগের প্রধান প্রফেসর নুরুল হুদার অপসারণ। অথচ প্রশাসনেরপক্ষ থেকে ২২ জন শিক্ষক সম্মিলিতভাবে পদত্যাগ করেন, যাকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা সৃষ্টির পরিকল্পিত চেষ্টা বলেঅভিযোগ করেছেন। ভিসির পদত্যাগপত্রেও ব্যর্থতার দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ায় উত্তেজনা আরও বাড়ে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করেছেন:
১. শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।
২. পূর্বের ১৩ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. ভিসি ও সিএসই বিভাগের প্রধানের স্থায়ী অপসারণ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্মান ও মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (UIU) থেকে অফিশিয়ালি ফেসবুকে তাদের বিবৃতি দিয়েছে।
২৭ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ওপ্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।