কক্সবাজারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবি-পরিবেশ সুরক্ষায় সংগঠনগুলো

বাংলাদেশ

কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) ও উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)। সহ-আয়োজক হিসেবে যুক্ত ছিল বেলা, এফইডি, মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তক।

বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী অভিযোগ করেন, বাতিল হওয়া প্রযুক্তি ও একটি বিতর্কিত আইনের আওতায় নির্মিত এই প্রকল্পটি অবৈধ, যা জনগণের উপর বছরে প্রায় ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা চাপাবে।

তিনি জানান, ২০১৩ সালে বিতর্কিত ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন’ অনুসারে মুন্সীগঞ্জে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় এবং ২০১৬ সালে পিডিবি ও ওরিয়ন গ্রুপের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) সই হয়। ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও, নির্মাণ কাজই শুরু হয়নি। ফলে ২০২২ সালে কেন্দ্রটি মাতারবাড়িতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয় এবং একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়।

হাসান মেহেদী আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে প্রকল্পটি আপনা-আপনি বাতিল হয়ে যেত। কিন্তু বারবার সময় বাড়িয়ে সেই সম্ভাবনাও নষ্ট করা হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে নাগরিক সমাজ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার কাছে দাবি পেশ করে।

সরকারি তিনটি ব্যাংক এ প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হলেও, এই ঋণেরও বিরোধিতা করছেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। পাশাপাশি, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগে জোর দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

হাসান মেহেদী আরও সতর্ক করে বলেন, এই প্রকল্প সময়মতো শেষ করা সম্ভব নয়। তবুও যদি শেষ করা যায়, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে। কেননা স্থানান্তরের ফলে ইজারা ও জ্বালানি পরিবহন ব্যয়ের হেরফের ঘটলেও তা চুক্তিতে প্রতিফলিত হয়নি, যা প্রকল্প বাতিলের পক্ষে আরেকটি যুক্তি দাঁড় করায়।

এর আগে, গত ৪ মে এক গণআবেদনের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানায় দেশের ১৪৪টি নাগরিক সংগঠন।

এ ছাড়া, গত ১ মার্চ স্থানীয় জনগণ মানববন্ধনের মাধ্যমে তাদের বিরোধিতা প্রকাশ করে। প্রকল্পের জন্য ২০২৩ সালের শেষ দিকে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের (ইআইএ) অনুমোদন দেওয়া হয়।

এই প্রকল্প বাতিলে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

প্রতিবেদক: রুশাইদ আহমেদ

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা”