জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না করে শহীদ সালাম-বরকত হলের পাশেই চারুকলা বিভাগের একাডেমিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পরিবেশগত ঝুঁকি, আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বার্থ এবং আগের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অমান্য করার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছেন হলের আবাসিক ছাত্ররা।
বুধবার (১৪ মে) বিকেলে শিক্ষার্থীরা চারুকলা ভবনের নির্ধারিত স্থানে টিনের বেষ্টনী ও লোহার খুঁটি সরিয়ে সেখানে প্রতীকীভাবে গাছ রোপণ করে প্রতিবাদ জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য হুমকিস্বরূপ।
শহীদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল মোমেন বলেন, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভবন নির্মাণের আগের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তখন ছাত্রদের গণস্বাক্ষর ও আন্দোলনের পর বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় ওঠে এবং পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অন্যত্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ফের আগের জায়গাতেই নির্মাণকাজ শুরুর চেষ্টা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গত ১৭ মার্চ ২০২৫ তারিখের সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তের আলোকে আজ আমরা গাছ লাগিয়ে স্থানটিকে উন্মুক্ত রাখতে চাই। অথচ চারুকলা বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী আমাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অপমান করেছে।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, “গত তিন দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরিকল্পিত নির্মাণের ফলে প্রায় ২৮ শতাংশ জলাশয় ও স্থলভূমি হারিয়ে গেছে। নির্মাণাধীন ভবন এলাকায় ৫০০টির বেশি গাছ ছিল, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লেকের পাড়ে বহুতল ভবন নির্মিত হলে তা পরিযায়ী পাখিদের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করবে।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কলার এক্সটেনশন ভবন এবং লেকচার থিয়েটার হল নির্মিত হচ্ছে, যা শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে যথেষ্ট। তাই মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নতুন কোনো ভবন নির্মাণ চলতে পারে না।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (জাবি সংসদ, একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর ইসলাম ইমন অভিযোগ করে বলেন, এই প্রকল্পে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) জালিয়াতি, পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) না করা এবং ছাত্রলীগের মাধ্যমে বাধা দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমরা চাই অংশীজনভিত্তিক আলোচনা ও টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হোক।
শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কোনো স্থাপনা নির্মাণ শুরু হলে তা প্রতিরোধে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রতিবেদক: আমির ফয়সাল