আজ ১৬ মে, ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ১৯৭৬ সালের এই দিনে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী–এর নেতৃত্বে রাজশাহী থেকে শুরু হয় ভারতের ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক লংমার্চ। বাংলাদেশের পানিসম্পদ রক্ষায় এটি ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা আজও জাতিকে অনুপ্রাণিত করে।
ভারত সরকারের নির্মিত গঙ্গা নদীর ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদনদী শুকিয়ে যেতে থাকে, কৃষিক্ষেত্রে দেখা দেয় বিপর্যয়, এবং পরিবেশের ওপর পড়ে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব। এই প্রেক্ষাপটে মওলানা ভাসানী ঘোষণা দেন প্রতিবাদ কর্মসূচির—ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করেন, “ভাটির দেশের পানি চাই।”
১৯৭৬ সালের ১৬ মে, হাজার হাজার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, ও সাধারণ মানুষ রাজশাহীতে একত্রিত হয়ে অংশ নেন এই লংমার্চে। রাজপথ মুখরিত হয়—“ফারাক্কা বাঁধ চাই না”, “ভাটির দেশের পানি চাই”—এমন প্রতিবাদী স্লোগানে। আন্দোলনটি কেবল ফারাক্কা বিরোধী নয়; এটি ছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অধিকার ও পানিসম্পদ রক্ষার এক বলিষ্ঠ ঘোষণাপত্র।
এই লংমার্চ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাড়া ফেলেছিল। এর পরপরই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, যা পরবর্তী সময়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
দিনটিকে কেন্দ্র করে আজ সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রয়েছে আলোচনা সভা, র্যালি এবং মওলানা ভাসানীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মাহফিল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত এই ঐতিহাসিক আন্দোলন আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বর্তমান সময়েও পানিসম্পদ নিয়ে যে সংকট বিদ্যমান, তা মোকাবিলায় তাঁর মতো দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব অত্যন্ত জরুরি।”
প্রতিবেদক: মো. জিসান রহমান