বিদেশে লোক পাঠানোয় জেরে ট্রেনে ঝুলিয়ে হত্যাচেষ্টা, মোবাইল চোর অপবাদে নির্যাতন

বাংলাদেশ

সৌদি আরবে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় এক প্রবাসী প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় ঘটে গেল চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, প্রবাসী প্রেরণের কাজ করা এক ব্যক্তিকে চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের দাবি, তিনি একজন ছিনতাইকারী এবং মোবাইল চোর; তবে ভুক্তভোগীর পরিবার বলছে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।

ঘটনার শিকার ব্যক্তি মতিউর রহমান (৫২), পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন এবং বিগত দেড় বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী পাঠানোর বৈধ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন। পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ৩-জন কর্মী পাঠিয়েছেন বলে জানায় তার পরিবার।

২০ দিন আগে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠান মতিউর। কিন্তু সেখানে গিয়ে কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।


ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া


ভুক্তভোগীর ছেলে আহসান হাবিব জানান, সজীবের ছোট ভাই রাকিব তার শ্যালকেরা বগুড়া থেকে ট্রেনে ফেরার পথে আমার বাবাকে একা পেয়ে ‘মোবাইল চোর’ আখ্যা দিয়ে মারধর শুরু করে। তারা তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তার কাছে থাকা ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

প্রায় চার-পাঁচ মিনিট ট্রেনের জানালায় ঝুলতে থাকা অবস্থায় আদমদিঘী উপজেলার নশরৎপুর স্টেশনের কাছে প্ল্যাটফর্মে ধাক্কা লেগে ট্রেন থেকে নিচে পড়ে যান মতিউর। পরে স্থানীয় জনতা ভুল বুঝে তাকে গণপিটুনি দেয়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মামলা দায়েরের জন্য পরিবার প্রথমে আদমদিঘী থানা পুলিশের কাছে গেলে তারা বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশের অধীন বলে অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গেলে সেখান থেকেও স্পষ্ট কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।

বিষয়ে আদমদিঘী থানার ওসি এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমরা অভিযোগ নেইনি।”
অন্যদিকে, সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি (জিআরপি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “ভুক্তভোগী আমাদের কাছে এসেছিল, কিন্তু পরে আদমদিঘী থানার ফোন পেয়ে তারা আবার সেখানেই চলে যায়। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।”

মতিউরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় সামাজিকভাবে তাকে তার পরিবারকে অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মতিউরের পক্ষে কথা বলেছেন।

কুশম্বী গ্রামের মোহাম্মদ হাসান বলেন, মতিউরের মাধ্যমে আমার দুই আত্মীয় বিদেশে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।
পারইল গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, “মতিউর ভালো মানুষ, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সজীবের বাবা মোহাম্মদ হেলাল বলেন, আমার ছেলে এখনো সৌদি আরবে কোনো কাজ পায়নি, তাই ক্ষোভ থেকে আমরা মতিউরের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তবে ট্রেনের ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। রাকিবের সংশ্লিষ্টতা নেই বলেই জানি।

অভিযুক্ত রাকিব হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।