সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার সারী-গোয়াইন ও পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়েছে, যা জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে শুকিয়ে থাকা খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে প্রাণ ফিরে এসেছে। সবুজ প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে বর্ষাকালের রূপ ও সৌন্দর্য। তবে অপরদিকে বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। কাজ বন্ধ হওয়ায় দিনমজুর শ্রেণির জীবনে নেমে এসেছে অসহায়তা। একইসঙ্গে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার জানান, ১৪ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস থাকলেও বর্তমানে সরাসরি কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। গোয়াইনঘাট উপজেলার তিনটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার আড়াই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫ মিলিমিটার এবং মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ১০১ মিলিমিটার।
এদিকে, জাফলংয়ে হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে পিয়াইন নদীতে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল স্রোত। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়। পানির তীব্র প্রবাহে নদীভাঙনের ঘটনাও শুরু হয়েছে। নদীতীরবর্তী বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, নদীর পানি দ্রুতগতিতে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে এবং সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইউনিট ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে জাফলংয়ের ডাউকি নদীতে পানির উচ্চতা বেড়েছে। ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
তবে আবহাওয়ার এমন বৈরী অবস্থার মধ্যেও কৃষকদের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি জানান, গোয়াইনঘাট উপজেলায় শতভাগ বোরো ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। কেবল সমলয় পদ্ধতিতে চাষকৃত আনুমানিক ৩০ হেক্টর জমির ধান কর্তন বাকি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্যা হলেও ধানের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।