বাংলাদেশে গ্যাস সংকট:প্রতিদিন বাড়ছে জনদুর্ভোগ

বাংলাদেশ

বাংলাদেশে গ্যাস সংকট প্রতিদিনই আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশের জ্বালানির অর্ধেকেরও বেশি চাহিদা গ্যাসের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে, কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ ঘাটতির কারণে এই গ্যাস-নির্ভর ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে এক চরম অস্থিরতা।

এ সংকট যেন এখন আর কেবল একটি প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, বরং তা পরিণত হয়েছে একটি জাতীয় দুর্যোগে। রান্নার চুলা থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানার চিমনি—সবখানেই পড়েছে নিস্তব্ধতা। মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে এক অসহায় প্রতীক্ষার নাম।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গৃহিণীরা এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করেন। কোথাও কোথাও দিনে মাত্র এক-দুই ঘণ্টা গ্যাস আসে, তাও আবার অতি দুর্বল চাপে। রান্নার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে, এবং অনেকেই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত খরচে সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।

এই সংকট শুধু ঘরের ভেতরে সীমাবদ্ধ নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকাংশ কেন্দ্র গ্যাসচালিত হওয়ায় দেশজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিং। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি হাসপাতালেও এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা, উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে অর্থনীতি।

শিল্পখাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। গার্মেন্টস, সিরামিক, ইস্পাত, প্লাস্টিকসহ নানা খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানি আদেশ বাতিলের ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় দেশের বৈদেশিক আয়ও হুমকির মুখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় গ্যাস আমদানি করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ফারুক হোসেন বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে গ্যাস শুধু রান্নাঘরের সমস্যা থাকবে না, বরং তা হয়ে উঠবে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার কারণ।” তিনি আরও বলেন, “দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসে বিনিয়োগ ও গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় দক্ষতা আনতেই হবে।”

সরকার এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে, পাশাপাশি নবায়নযোগ্য উৎসেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে। এর মাঝে জনগণের দুর্ভোগ যে প্রতিদিন বাড়ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

 

প্রতিবেদকঃওমর ফারুক

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা