মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে টইটম্বুর টাঙ্গুয়া হাওর এখন রূপে-সৌন্দর্যে অপরূপ। হিজল ও করচ গাছের সারি, পাহাড়ের প্রতিচ্ছায়া, ঢেউয়ের কলতান আর পাখির ডাক মিলিয়ে হাওরের বর্ষামুখর রূপ মুগ্ধ করছে দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটককে। ঈদুল আজহার ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গুয়া হাওর এলাকা।
দীর্ঘ ছুটিকে ঘিরে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছেন পর্যটকেরা। শত শত ভ্রমণপিপাসু অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন হাউসবোটসহ বিভিন্ন নৌযান। হাওরের বিলাসবহুল ৯০টি হাউসবোট এবং অসংখ্য দেশীয় বোট ইতোমধ্যেই পুরোপুরি বুকড বলে জানিয়েছে হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
দুই দিন এক রাতের প্যাকেজে জনপ্রতি খরচ পড়ছে চার হাজার থেকে বারো হাজার টাকার মধ্যে। এ প্যাকেজে থাকছে পাঁচ বেলা খাবার, যেখানে রয়েছে হাওরের মাছ, হাঁসের মাংস, কুয়েল পাখি, খাসি, ভর্তা-ভাজি ও নানা রকম সবজি। সঙ্গে থাকছে নাস্তা, চা-কফি, নির্ধারিত পর্যটন স্পট ঘোরা এবং নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।
প্রতিটি হাউসবোটে আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উৎসব উপলক্ষে বোটগুলোকে নতুন রঙ, বিছানা ও পর্দা দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিছু বোটে রয়েছে এয়ার কন্ডিশন, এটাচ বাথরুম এবং পারিবারিক কেবিনের ব্যবস্থা।
ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে আগত পর্যটকেরা সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি, বৈঠাখালি, ওয়েজখালি ঘাট কিংবা তাহিরপুরের আনোয়াপুর ও থানা ঘাট থেকে নৌভ্রমণে যাত্রা শুরু করছেন। যাত্রাপথে পর্যটকরা ঘুরে দেখছেন নিলাদ্রী লেক, শিমুল বাগান, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী, টাঙ্গুয়া ওয়াচ টাওয়ার এবং লাকমাছড়ার মতো দর্শনীয় স্থানগুলো।
সুনামগঞ্জ হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ জানান, “প্রায় সব হাউসবোট বুকড হয়ে গেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি বোটে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট এবং অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম কাজ করবে এবং পরিবেশ দূষণ রোধেও নজর দেওয়া হচ্ছে।”
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, “ঈদের ছুটিতে সম্ভাব্য পর্যটক ভিড় সামাল দিতে পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আনোয়াপুর ও থানা ঘাটে নিয়মিত টহলসহ ঘাটে টাঙানো থাকবে পুলিশের তথ্যপত্র ও যোগাযোগ নম্বর।”
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বলেন, “হাওরে চলাচলরত সব বোটকে নির্ধারিত নীতিমালার আওতায় চলতে বলা হয়েছে। আপাতত হাওরে ভ্রমণের মতো কোনো সমস্যা নেই। তবে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি দেখা দিলে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে নৌযান চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হবে।”
সৌন্দর্য ও নিরাপত্তার এমন সমন্বয় টাঙ্গুয়া হাওরকে ঈদের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নিঃসন্দেহে এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা।