নৌকা তো অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু কখনো কি কাগজের তৈরি নৌকায় ধান বহন করতে দেখেছেন? এ দৃশ্য এখন নিয়মিত হয়ে উঠেছে চলনবিল এলাকায়। এবারের ঈদুল আজহার দিনটি নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চলের কৃষকদের জন্য আনন্দ নয়, বরং বেদনার দিন। আগাম বন্যায় তলিয়ে গেছে তাদের শেষ ভরসার ফসল। পানির তোড়ে মাঠে থাকা ধান কাটা তো দূরের কথা, যেটুকু ফসল পেয়েছেন, সেটুকুও ঘরে তুলতে ভোগান্তির শেষ নেই।
নাটোরের গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহর উপজেলায় হঠাৎ বেড়ে যাওয়া নদীর পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। অনেক জমিতে যখন ধান পাকতে শুরু করেছিল, তখনই আগাম বর্ষার প্রবল পানি ঢুকে পড়ে বিলাঞ্চলে। ফলে কৃষকের সাধের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়—কাটার আগেই সব হারানোর বেদনায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন অনেকেই।
চলনবিলের কৃষকদের জীবিকা পুরোপুরি কৃষিনির্ভর। ধানই তাদের প্রধান ও একমাত্র আশ্রয়। কিন্তু এবার সেই আশ্রয়ও কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতি।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, আমার জমি অল্প পরিমাণ। এর অর্ধেক ফসল পেয়েছি, অর্ধেক গোল্লায় গেছে। এছাড়া আবহাওয়া খারাপ, রোদ নেই, খোলা নেই। রাস্তা-ঘাট ঠিক নেই, কামলা নেই। ধানের ফলনও কমে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিকে আরও করুণ করে তুলেছে যোগাযোগব্যবস্থার দুরবস্থা। যাতায়াতের উপযুক্ত নৌকার অভাবে অনেকে পেপার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ছোট ছোট নৌকা ব্যবহার করছেন ধান ঘরে তোলার জন্য। যা যেমন কষ্টের প্রতীক, তেমনি চলনবিলবাসীর জীবনসংগ্রামের এক চিত্রও।
ঈদের দিনে যেখানে শহরের মানুষ আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন, সেখানে চলনবিলের হাজারো পরিবার কাটিয়েছে নিরানন্দ, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তায় ভরা একটি দিন।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, আগাম বন্যা সম্পর্কে সময়মতো পূর্বাভাস না থাকায় ও তেমন কোনো প্রস্তুতি না থাকায় তারা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এখনই জরুরি ভিত্তিতে সরকারি সহায়তা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে পুরো মৌসুমটি হয়ে উঠবে কৃষকের জন্য ধ্বংসাত্মক।