ঢাকা ০৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে বিতর্ক, কাজ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশঃ ০৮:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
  • / 14

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ শিরোনামের একটি ভাস্কর্য ভাঙার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমালোচনার প্রেক্ষিতে বুধবার (১৮ জুন) এক জরুরি অনলাইন সভায় আপাতত ভাস্কর্য ভাঙার কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পুকুর সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্পের অংশ হিসেবে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মাঝামাঝি এলাকায় একটি পুকুরপাড়ে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। এটি নির্মিত হয় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের মেয়াদে, যিনি পরবর্তীতে দুর্নীতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের মুখে পড়েন।

শিক্ষার্থীদের মতে, ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যেই ভাস্কর্যটি ভাঙার উদ্যোগ নেওয়াটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসাপূর্ণ। ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান তুষার বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। ডিজাইন সংশোধন করে সংরক্ষণ করাই বরং অধিক যুক্তিসঙ্গত হতো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, “বর্তমান প্রশাসন এই ভাস্কর্য গ্রহণ করেনি। উপাচার্য স্যারের পক্ষ থেকেই ভাঙার সিদ্ধান্ত এসেছে।”

তবে বর্তমানে রুটিন দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, “ডিনদের সঙ্গে আগেই আলোচনা হয়েছিল। কিছু আপত্তি থাকায় সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সম্ভবত এই উদ্যোগ।”

অন্যদিকে রেজিস্ট্রার, প্রকৌশল দপ্তর ও একাধিক অনুষদের ডিনরা জানিয়েছেন, ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে আগে কোনো লিখিত সিদ্ধান্ত হয়নি, এবং কী ধরনের আপত্তি ছিল সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, “ভাস্কর্যটি অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ২২ জুন বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা হবে।”

বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ভাস্কর্যের পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং তিন দফা দাবি তোলেন ভাস্কর্য নির্মাণে প্রশাসনিক অনিয়মের তদন্ত, মূল নকশা অনুযায়ী সংস্কার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ের জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

Please Share This Post in Your Social Media

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে বিতর্ক, কাজ স্থগিত

প্রকাশঃ ০৮:৫২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ শিরোনামের একটি ভাস্কর্য ভাঙার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমালোচনার প্রেক্ষিতে বুধবার (১৮ জুন) এক জরুরি অনলাইন সভায় আপাতত ভাস্কর্য ভাঙার কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পুকুর সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্পের অংশ হিসেবে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মাঝামাঝি এলাকায় একটি পুকুরপাড়ে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। এটি নির্মিত হয় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের মেয়াদে, যিনি পরবর্তীতে দুর্নীতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের মুখে পড়েন।

শিক্ষার্থীদের মতে, ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যেই ভাস্কর্যটি ভাঙার উদ্যোগ নেওয়াটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসাপূর্ণ। ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান তুষার বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি ভাঙার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। ডিজাইন সংশোধন করে সংরক্ষণ করাই বরং অধিক যুক্তিসঙ্গত হতো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, “বর্তমান প্রশাসন এই ভাস্কর্য গ্রহণ করেনি। উপাচার্য স্যারের পক্ষ থেকেই ভাঙার সিদ্ধান্ত এসেছে।”

তবে বর্তমানে রুটিন দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, “ডিনদের সঙ্গে আগেই আলোচনা হয়েছিল। কিছু আপত্তি থাকায় সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সম্ভবত এই উদ্যোগ।”

অন্যদিকে রেজিস্ট্রার, প্রকৌশল দপ্তর ও একাধিক অনুষদের ডিনরা জানিয়েছেন, ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে আগে কোনো লিখিত সিদ্ধান্ত হয়নি, এবং কী ধরনের আপত্তি ছিল সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, “ভাস্কর্যটি অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ২২ জুন বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা হবে।”

বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা ভাস্কর্যের পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং তিন দফা দাবি তোলেন ভাস্কর্য নির্মাণে প্রশাসনিক অনিয়মের তদন্ত, মূল নকশা অনুযায়ী সংস্কার, রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ের জন্য দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দৃষ্টিভঙ্গির দ্বন্দ্ব ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”