ঢাকা ১১:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া মারা গেছেন

প্রজন্ম কথা ডেস্ক
  • প্রকাশঃ ০৪:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • / 6

এই ঘোড়ার পিঠে চড়ে কবর খোঁড়ার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যেতেন মনু মিয়া ছবি: সংগৃহীত


মানুষের অন্তিম যাত্রায় নিজের জীবন উৎসর্গ করা কিশোরগঞ্জের ইটনার সেই নিঃস্বার্থ গোরখোদক মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মনু মিয়ার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন মনু মিয়া। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জীবনভর তিনি কেবল মানুষের অন্তিম বিদায়ের আয়োজনেই ব্যস্ত থেকেছেন। ঝড়বৃষ্টি কিংবা রাত-বিরাত উপেক্ষা করে খুন্তি, কোদাল নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কবরস্থানে ছুটে যেতেন মনু মিয়া। বিনা পারিশ্রমিকে গত ৫০ বছরে তিনি খুঁড়েছেন অন্তত ৩ হাজার ৫৭টি কবর। কারো মৃত্যুসংবাদ পেলেই তাঁর একটাই পরিচয়—সবার আগে পৌঁছাতে হবে, পরম যত্নে কবর খুঁড়তে হবে।

ঘোড়াটি যেন দ্রুত যাতায়াতের বাহন হয় এজন্য নিজের ধানি জমি বিক্রি করে তিনি কিনেছিলেন সেই বিখ্যাত ঘোড়া। দুর্বৃত্তদের হাতে ঘোড়াটি হত্যার পরও মনু মিয়া কোনো ক্ষতিপূরণ কিংবা দান-সহায়তা গ্রহণ করেননি। দেশ-বিদেশ থেকে বহুজন তাঁকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চাইলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, শুধু চেয়েছিলেন সবার দোয়া আবার যেন সুস্থ হয়ে মানুষের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।

ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জ থেকে রাজধানীর বনানী কবরস্থান সব জায়গাতেই তাঁর নিঃস্বার্থ সেবার গল্প মানুষের মুখে মুখে। কবর খুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, প্রতিটি মৃত মানুষের নাম, মৃত্যুর তারিখ-সময় নিজের ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই প্রমাণ করে, নিঃস্বার্থ সেবাই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, মনু মিয়া সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি শুধু গোরখোদক ছিলেন না, ছিলেন গ্রামের মানুষের আস্থার প্রতীক।

আজ বিকেলে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে সেই মনু মিয়াকেই শায়িত করা হবে তাঁর প্রিয় মাটিতে যে মাটিকে তিনি আজীবন মানুষের শেষ ঠিকানা বানাতে নিঃশব্দে খুঁড়েছেন। আজ তাঁর জন্যই খোঁড়া হচ্ছে আরেকটি কবর তাঁর নিজের জন্য।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”

প্রাসঙ্গিক

শেয়ার করুন

তিন হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া মারা গেছেন

প্রকাশঃ ০৪:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

এই ঘোড়ার পিঠে চড়ে কবর খোঁড়ার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যেতেন মনু মিয়া ছবি: সংগৃহীত


মানুষের অন্তিম যাত্রায় নিজের জীবন উৎসর্গ করা কিশোরগঞ্জের ইটনার সেই নিঃস্বার্থ গোরখোদক মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মনু মিয়ার ভাতিজা শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন মনু মিয়া। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। শুক্রবার রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জীবনভর তিনি কেবল মানুষের অন্তিম বিদায়ের আয়োজনেই ব্যস্ত থেকেছেন। ঝড়বৃষ্টি কিংবা রাত-বিরাত উপেক্ষা করে খুন্তি, কোদাল নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কবরস্থানে ছুটে যেতেন মনু মিয়া। বিনা পারিশ্রমিকে গত ৫০ বছরে তিনি খুঁড়েছেন অন্তত ৩ হাজার ৫৭টি কবর। কারো মৃত্যুসংবাদ পেলেই তাঁর একটাই পরিচয়—সবার আগে পৌঁছাতে হবে, পরম যত্নে কবর খুঁড়তে হবে।

ঘোড়াটি যেন দ্রুত যাতায়াতের বাহন হয় এজন্য নিজের ধানি জমি বিক্রি করে তিনি কিনেছিলেন সেই বিখ্যাত ঘোড়া। দুর্বৃত্তদের হাতে ঘোড়াটি হত্যার পরও মনু মিয়া কোনো ক্ষতিপূরণ কিংবা দান-সহায়তা গ্রহণ করেননি। দেশ-বিদেশ থেকে বহুজন তাঁকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চাইলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, শুধু চেয়েছিলেন সবার দোয়া আবার যেন সুস্থ হয়ে মানুষের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।

ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জ থেকে রাজধানীর বনানী কবরস্থান সব জায়গাতেই তাঁর নিঃস্বার্থ সেবার গল্প মানুষের মুখে মুখে। কবর খুঁড়েই ক্ষান্ত হননি, প্রতিটি মৃত মানুষের নাম, মৃত্যুর তারিখ-সময় নিজের ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই প্রমাণ করে, নিঃস্বার্থ সেবাই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন বলেন, মনু মিয়া সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি শুধু গোরখোদক ছিলেন না, ছিলেন গ্রামের মানুষের আস্থার প্রতীক।

আজ বিকেলে নিজ গ্রামে জানাজা শেষে সেই মনু মিয়াকেই শায়িত করা হবে তাঁর প্রিয় মাটিতে যে মাটিকে তিনি আজীবন মানুষের শেষ ঠিকানা বানাতে নিঃশব্দে খুঁড়েছেন। আজ তাঁর জন্যই খোঁড়া হচ্ছে আরেকটি কবর তাঁর নিজের জন্য।

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন- “প্রজন্ম কথা”