স্ত্রী হারানো বৃদ্ধকে ঘরছাড়া করে ছেলেমেয়েরা, রেললাইনে শুয়ে জীবনের ইতি টানলেন ৭০ বছরের কৃষক।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলস্টেশনে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন এক পেঁয়াজচাষি বৃদ্ধ। সোমবার সকালে (১৫ এপ্রিল) ঘটনাটি ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মীর রুহুল আমিন (৭০)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মাধ্যমে ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের পাশ দিয়ে আরেকটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে। এ সময় মীর রুহুল আমিন দুই লাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ট্রেন আসার মুহূর্তে তিনি হঠাৎই লাইনে শুয়ে পড়েন। ট্রেনের চাকা তার দেহকে দু’ভাগ করে দিয়ে যায়। ওই সময় এক তরুণ ভিডিও ধারণ করছিলেন, যার ক্যামেরায় ধরা পড়ে ঘটনাটি।
এ ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই মন্তব্য করেন, বৃদ্ধের পরিবার তাকে অবহেলা করেছিল, যার ফলে তিনি হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নাকি দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তাকে পালাক্রমে রাখলেও পরে আর কেউ রাখেনি। এমনকি মৃত্যুর দিন সকালেও নাকি ছেলেদের বউদের সঙ্গে ঝগড়ার পর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয় এবং তার জিনিসপত্র উঠানে ফেলে দেওয়া হয়।
বৃদ্ধের পরিবার দাবি করছে, তিনি আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। পেঁয়াজ চাষে বিনিয়োগ করেছিলেন এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে। ফলন ভালো হলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম কম থাকায় ঋণ শোধে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
তার ছেলে মীর রনী জানান, তার বাবা তিনটি এনজিও থেকে মোট প্রায় ১.৯৪ লাখ টাকা ঋণ নেন – যার মধ্যে এখনো ৯৯ হাজার ২৯০ টাকা অবশিষ্ট। প্রতি সপ্তাহে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি দিতে হতো। পেঁয়াজ চাষের ফলন আশানুরূপ না হওয়ায় এবং বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।
বৃদ্ধের ভাতিজা মীর মোফাক্কর হোসেন বলেন, তার চাচা জমি বর্গা নিয়ে ১ বিঘা ৫ কাঠা জমিতে চাষাবাদ করেন। শুধু এনজিও নয়, স্থানীয় আড়তদার ও মহাজনের কাছ থেকেও ঋণ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি ঋণের চাপে ছিলেন। শারীরিকভাবেও কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। কারও সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলতেন না। এইসব কারণেই হয়তো তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।”