৫ বছর পর বাংলাদেশ -পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক: সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত

বাংলাদেশ

দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে অংশ নেবেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।

গতকাল বুধবার আমনা বালুচ ঢাকায় এসে পৌঁছান। দুই দেশের সম্পর্ক নতুনভাবে এগিয়ে নিতে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছে।

তবে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি অমীমাংসিত ইস্যুগুলো আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা, অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদ থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রাপ্ত ত্রাণ অর্থ ফেরতের দাবি দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন রয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, “একাত্তরের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর রাতারাতি সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা আশা করা বাড়াবাড়ি। তবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ইস্যু বাদ দিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে, এমনটা ভাবার সুযোগ নেই।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক শুধু কূটনৈতিক স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি জনগণের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনের একটি সুযোগ। দুই দেশের মাঝে সফরবিনিময় দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকলেও আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা কিছুটা অব্যাহত ছিল। 

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৫৬ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। তবে চলমান বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের প্রভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ মূলত পাকিস্তান থেকে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল ও খাদ্যশস্য আমদানি করে, অপরদিকে পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট, চা, চামড়া ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আমদানি করে থাকে।

তবে শুল্কের উচ্চ হার, অশুল্ক বাধা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি কিছু বিধি শিথিল করায় বাণিজ্য বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতেও সীমিত আকারে সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে পাকিস্তান অংশ নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই পাকিস্তান এই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে না। তাই ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন ও অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করেই এগিয়ে যেতে হবে।

আজকের বৈঠক বাংলাদেশের জন্য কেবল কূটনৈতিক নয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—যা দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পথরেখা নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।