সুনামগঞ্জের পর্যটনসমৃদ্ধ হাওরাঞ্চলে হাউজবোট ব্যবসায়ীদের প্রতারণা ও পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একের পর এক অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন জানায়, হাওরে পর্যটকদের পরিবহনে ব্যবহৃত হাউজবোটগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হয়রানির একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সেবা না দেওয়া, যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাতে প্রতিশ্রুত গন্তব্যে না যাওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পর্যটকদের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ফেলে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ ও আবাসনসহ ন্যূনতম সুবিধা না দেওয়ার অভিযোগ।
বিশেষভাবে “উল্লাস ট্রাভেল” পরিচালিত “হাওরডিঙ্গি” নামের একটি হাউজবোটের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। পর্যটকদের অভিযোগ, হাউজবোটটি নির্ধারিত সময়মতো সেবা দেয় না, মাঝপথে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে যাত্রা বাতিল করে এবং কখনও কখনও পর্যটকদের রেখে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাওর ভ্রমণকারী পর্যটকদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে। কোনো রকম অনিয়ম বা প্রতারণার শিকার হলে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়ে চলা বিশৃঙ্খল পরিবেশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। বিশেষ করে কিছু পর্যটকের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এবং হাউজবোট বা লোকালবোটে উচ্চস্বরে গান বাজানোয় স্থানীয়দের বিরক্তির মাত্রা বেড়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম জানান, ঈদের ছুটিতে অনেক পর্যটক ডাম্পসেট ব্যবহার করে অতিমাত্রায় উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছেন, যা জনজীবনের স্বাভাবিকতা ব্যাহত করছে। এ অবস্থায় সোমবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—হাওরের কোনো নৌযানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো যাবে না। নির্দেশনা অমান্য করলে অভিযানে গিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সুনামগঞ্জের অপরূপ হাওরাঞ্চলে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় স্বাভাবিক হলেও, শৃঙ্খলা ও সেবার মান বজায় রাখতে এবার প্রশাসনের অবস্থান কঠোর। প্রশাসন আশা করছে, পর্যটক এবং ব্যবসায়ী উভয়ের সচেতনতায় হাওরভ্রমণ আরও নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হবে।