ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় ছাত্র সংসদ ও অদৃশ্য সংগঠনগুলোর নামে প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ফি আদায় করা হচ্ছে যার কোনো জবাবদিহিতা নেই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ১৬ বছর ধরে কলেজে ছাত্র সংসদের কোনো নির্বাচন হয়নি। নেই কোনো কার্যক্রম বা প্রতিনিধি কাঠামো, অথচ প্রতি বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ‘ছাত্র সংসদ ফি’ হিসেবে আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা করে।
এছাড়াও, ‘রেড ক্রিসেন্ট’ এবং ‘রেঞ্জার ইউনিট’ নামে যথাক্রমে ২০ ও ১০ টাকা করে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে—যাদের কার্যক্রম বাস্তবে অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এসব ফি আদায়ের পরও কোনো দৃশ্যমান উপকার বা সক্রিয়তা চোখে পড়ে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, যেহেতু এসব সংগঠনের নামে টাকা আদায় করা হয়, তাহলে প্রতিবছর আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করা উচিত। যদি কোনো কার্যক্রম না থাকে, তাহলে সেই খাতে ফি আদায়ও বন্ধ হওয়া উচিত।
শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন এই টাকা কোথায় যায়, কারা এর হিসাব দেয়, এবং কেন অনুপস্থিত সংগঠনের নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছে? তাদের মতে, এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৈধ একটি প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।
বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, যে খাত থেকে ফি আদায় করা হয়, সেই খাতেই ব্যয় করা হয়।
তবে রেঞ্জার ইউনিট কখনও গঠিত না হওয়া এবং রেড ক্রিসেন্ট কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকার পরও কেন ফি আদায় চলছে—এই প্রশ্নে তিনি জানান, রেড ক্রিসেন্ট ইতোমধ্যেই গঠিত হয়েছে, কার্যক্রম শুরু হবে। রেঞ্জার ইউনিটও শীঘ্রই গঠন করা হবে।
ছাত্র সংসদ ফি-সংক্রান্ত আয়-ব্যয়ের তথ্য জানতে চাওয়া হলে অধ্যক্ষ স্পষ্টভাবে বলেন, ছাত্র সংসদের টাকা ছাত্র সংসদেই যায়, আর আমি তোমাকে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নই—যেখানে জবাবদিহি করার, সেখানে করব।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সংগঠনগুলো সত্যিকার অর্থে সক্রিয় না থাকলে ফি আদায় করাটাই অনৈতিক। পাশাপাশি তারা প্রশাসনের কাছে প্রতিবছর অডিট রিপোর্ট প্রকাশ এবং ফি কাঠামো পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছেন।
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ শুধু নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্র নয় এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ এবং গণতান্ত্রিক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রেড ক্রিসেন্ট ও রেঞ্জার ইউনিটের মতো সংগঠন তরুণদের মানবিক ও সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করে। অথচ এসব অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতা দুটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।