জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘লং-মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা

ক্যাম্পাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আবাসন ভাতা চালু ও অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করাসহ একাধিক দাবি জানিয়ে আসছেন বহু বছর ধরে। জবির আবাসন সংকট আজকের সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘদিনের সমস্যা। এর পরেও সরকার বা ইউজিসি কোনো ধরনের দায়িত্ব নেয়নি বিগত ২০ বছর পার হয়ে গেলেও।

এবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার অভিমুখে লং মার্চের ঘোষণা দিয়েছে জবি শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে ইউজিসির সাথে মিটিং করে আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে লং মার্চের ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, “কালই আমরা লং মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি পালন করবো। যদি প্রয়োজন হয় আমরা যমুনার সামনে থেকেই অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করব। কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।”

উল্লেখ্য, গত সোমবার (১২ মে) শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় এক ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ। এরপর আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জবির বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন বিষয়েআলোচনা হয়।

শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের দাবি যথাযথভাবে উপস্থাপন করলেও ইউজিসি বরাবরের মতোই দায়সারা আশ্বাস দিয়ে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে।

এই বিষয়ে সাক্ষাৎকালে ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফয়েজ বলেন, “বাংলাদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জবির শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করার। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সংকট তা সমাধান করতে একটু সময় দিতে হবে আমাদের। আমরা প্রাথমিক অবস্থায় দুটো অস্থায়ী আবাসনের উদ্যোগ নিচ্ছি। একই সাথে বাজেট ও আবাসন ভাতার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও প্রধান উপদেষ্টার সাথে সর্বচ্চ গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবো এবং সকল মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ে অতি দ্রুতই একটি মিটিংয় আয়োজনের চেষ্টা করবো।”

এই বিষয়ে ফিন্যান্স বিভাগের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদ আল মাহমুদ নাবিল বলেন, “আবাসনের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে ১০ গুণ বেশি কষ্ট করতে হয়। তবুও আমরা পিছিয়ে নেই। তবে এবার এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা সোচ্চার। উপর মহল ও ইউজিসির কাছে আমার স্পষ্ট বিবৃতি – হয় বৈষম্য বন্ধ করুন নাহয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিন। বাজেট নিয়ে বৈষম্য আর চলবে না।”

জবি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা আমাদের বাজেট ১৫৪ কোটি থেকে ৩০৫ কোটি টাকায় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু ইউজিসি তা নাকচ করে দেয়। তারা স্বীকার করেছে যে জবির শিক্ষার্থীরা জরাজীর্ণ পরিবেশে পড়াশোনা করছে, কিন্তু বলেছে তাদের হাত-পা বাঁধা। তারা কিছু করতে পারবে না। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি, কিন্তু সেখান থেকেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। আমাদের অনশন কর্মসূচির সময় বলা হয়েছিল বাজেট বাড়ানো হবে, কিন্তু কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় অভিভাবকের কাছে দাবি পৌঁছে দিতে আমরা যমুনার উদ্দেশ্যে পদযাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

উল্লেখ্য, আগামীকাল লং মার্চ টু যমুনা কর্মসূচিতে উত্থাপিত দাবিসমূহঃ

১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে।

৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রতিবেদক:ইমতিয়াজ উদ্দিন

সর্বশেষ খবর পেতে অনুসরণ করুন-“প্রজন্ম কথা